
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন জাতীয় পার্টির একাংশের সভাপতি ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। একই দিনে জুলাই অভ্যুত্থানের একাধিক মামলার আসামি আনিসুল ইসলাম মাহমুদকে স্বৈরাচারের দোসর উল্লেখ করে তাকে গ্রেফতারের দাবিতে পুলিশের কাছে আবেদন করেছেন এক জুলাইযোদ্ধা ছাত্রদল নেতা।
মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী ও নগরীর একাংশ) আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদের পক্ষে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা হয়। রিটার্নিং কর্মকর্তা চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় থেকে এ মনোনয়নপত্র নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ চট্টগ্রাম-৫ আসন থেকে একাধিকবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে মহাজোটের সংসদ সদস্য হিসেবে তিনি পানিসম্পদ মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। পরে জি এম কাদেরের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির মূলধারা থেকে বের হয়ে আনিসুল ইসলাম মাহমুদসহ কয়েকজন নেতা আলাদা রাজনৈতিক দল গঠন করেন।
এরই ধারাবাহিকতায় গত ৮ ডিসেম্বর আনিসুল ইসলাম মাহমুদের জাতীয় পার্টি এবং আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি জেপির সঙ্গে ২০টি রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট (এনডিএফ) নামে একটি জোটের আত্মপ্রকাশ ঘটে। মঙ্গলবার ঢাকায় এনডিএফের পক্ষ থেকে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ১২২টি আসনে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়। এরপরই ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদের পক্ষে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা হয়, যেখানে রাজনৈতিক দল হিসেবে এনডিএফের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
এদিন বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা এবং সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কার্যালয় মিলিয়ে মোট ৩১টি মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা হয়। মনোনয়ন সংগ্রহকারীদের মধ্যে বিএনপি, এনসিপি, ইসলামী ফ্রন্ট, জাসদ, জাতীয় পার্টি, ইনসানিয়াত বিপ্লবসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা রয়েছেন।
এদিকে একই দিনে ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদকে গ্রেফতারের দাবিতে নগর পুলিশ কমিশনার ও জেলা পুলিশ সুপারের কাছে আলাদা আবেদন করেন চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মো. ওমর ফারুক। আবেদনে তিনি হাটহাজারী থানায় দুটি এবং নগরীর কোতোয়ালি ও ডবলমুরিং থানায় দুটি মোট চারটি মামলার কথা উল্লেখ করে আনিসুল ইসলাম মাহমুদকে অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি জানান।
ওমর ফারুক জানান, বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলাকালে ২০২৪ সালের ১৬ জুলাই নগরীর মুরাদপুর এলাকায় নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের হামলায় তিনি গুরুতর আহত হন।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং পরবর্তীতে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে তিনি সুস্থ হন। একইদিন ওই হামলায় তার সহযোদ্ধা চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রদলের নেতা ওয়াসিম আকরাম নিহত হন।
তিনি বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানে শহিদ ও আহতদের রক্তের দাগ এখনো শুকায়নি। অথচ একাধিক মামলার আসামি হওয়া সত্ত্বেও গণহত্যায় জড়িতদের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান কোনো আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এখন সেই দোসরেরাই নির্বাচনের মাঠে নেমে পড়ছেন। এতে জুলাই আন্দোলনকারীরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
গ্রেফতারের দাবিতে অনড় অবস্থান জানিয়ে তিনি আরও বলেন, আগে গণহত্যাকারীদের বিচার হতে হবে। বিচার ছাড়া কেউ রাজনীতি কিংবা নির্বাচনে অংশ নিতে পারে না। একজন জুলাইযোদ্ধা হিসেবে তিনি এই পরিস্থিতি মেনে নিতে পারেন না।




