হাদির মৃত্যুতে উত্তরা জুড়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলন, খুনিদের গ্রেফতারে ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম

রাজধানীর উত্তরার বিএনএস সেন্টার, আজমপুর, মুগ্ধ মঞ্চ, বিমানবন্দর, উত্তরখান দক্ষিণখান, তুরাগ,খিলক্ষেত-নিকুঞ্জ এলাকার বাতাসে বইছে শোকের মাতম

ভারতীয় আধিপত্য বাদের বিরুদ্ধে আপসহীন কণ্ঠস্বর, ‘জাগ্রত জুলাই’-এর নির্ভীক কলম যোদ্ধা ওসমান হাদির অকাল মৃত্যুতে শোকে স্তব্ধ ও ক্ষোভে ফেটে পড়ে উত্তরার সর্বস্তরের মানুষ।

গতকাল জুম্মার নামাজ শেষে বাংলাদেশের প্রতিটি মসজিদে হাদির রূহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করা হয়। এর আগে বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার সারাদিন উত্তরাসহ খিলক্ষেত এলাকায় ‘জাগ্রত জুলাই সংসদ’-এর আহ্বানে সমবেত হতে থাকেন হাজারো ছাত্র-জনতা।

শহীদ ওসমান হাদির হত্যার বিচার এবং আধিপত্য বাদের অবসানের দাবিতে মুহূর্তেই জনসমুদ্রে রূপ নেয় পুরো উত্তরা এলাকা।

গত ১২ ডিসেম্বর জুমার নামাজের পর জনসংযোগ চলাকালে আততায়ীর কাপুরুষোচিত গুলিতে বিদ্ধ হন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদি। দেশে প্রাথমিক চিকিৎসার পর উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হলেও শেষ রক্ষা হয়নি। গত ১৮ ডিসেম্বর রাতে বিদেশের মাটিতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এই তরুণ বিপ্লবী। গতকাল তার মরদেহকে শ্রদ্ধা জানাতে বিমানবন্দরে আসা মানুষের চোখে ছিল পানি, আর কণ্ঠে ছিল বিচারের দাবি।

বিক্ষোভ মিছিলে উত্তাল বিমানবন্দর সড়ক, বিভিন্ন এলাকা থেকে বিক্ষোভ মিছিল বিমানবন্দর অভিমুখে যাত্রা করে। মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা ‘হাদির রক্ত বৃথা যেতে দেব না’, ‘আধিপত্যবাদ নিপাত যাক’

তুমি কে আমি কে, হাদি হাদি এমন সব স্লোগানে রাজপথ কাঁপিয়ে তোলেন। এ দিকে শহীদ হাদির স্মৃতির প্রতি সম্মান জানিয়ে একটি মিছিল পুনরায় খিলক্ষেত বাজারে এসে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মিলিত হয়

সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে জাগ্রত জুলাই সংসদের আহ্বায়ক ডা. এম মাহিদুল ইসলাম জিহাদ অত্যন্ত আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। তিনি বলেন: “ওসমান হাদি শুধু একজন ব্যক্তি ছিলেন না, তিনি ছিলেন ইনসাফ ভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার এক জীবন্ত স্বপ্ন। তাকে যারা স্ব-শরীরে হত্যা করেছে এবং যারা নেপথ্যে থেকে কলকাঠি নেড়েছে, তাদের আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার করতে হবে। অন্যথায় এই দাবানল সারা দেশে ছড়িয়ে পড়বে।”

সমাবেশে আসা বক্তারা বলেন, ওসমান হাদির মৃত্যু কোনো সাধারণ মৃত্যু নয়; এটি একটি চেতনার জন্ম। সিঙ্গাপুরের হাসপাতালে তার লড়াই শেষ হলেও, বাংলাদেশের প্রতিটি অলিগলিতে এখন হাজারো ওসমান হাদি আধিপত্য বাদের বিরুদ্ধে লড়াই করার শপথ নিয়েছেন

সন্ধ্যায় উত্তরার বিভিন্ন এলাকায় মোনাজাতের মাধ্যমে শহীদ ওসমান হাদির আত্মার মাগফিরাত কামনা করা হয়। উপস্থিত সাধারণ মানুষ অশ্রুসিক্ত নয়নে অঙ্গীকার করেন, হাদির অপূর্ণ স্বপ্ন

একটি সার্বভৌম ও ইনসাফ ভিত্তিক বাংলাদেশ গড়াই হবে তাদের আগামী দিনের একমাত্র লক্ষ্য।