
ভারতের আধিপত্যবাদ ও একপক্ষীয় নীতির বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অবস্থান নেওয়া দেশের অন্তত ৫০ জন রাজনৈতিক নেতা, ছাত্রনেতা, সাংবাদিক ও ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব বর্তমানে উচ্চ নিরাপত্তা ঝুঁকিতে রয়েছেন বলে নিরাপত্তাসংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র দাবি করেছে।
সাম্প্রতিক সময়ে কয়েকটি হামলা, হুমকি এবং ডিজিটাল নজরদারির ঘটনার পর এই আশঙ্কা আরও জোরালো হয়েছে।
নিরাপত্তা সূত্রগুলোর ভাষ্য অনুযায়ী, যেসব ব্যক্তি বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব, স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি, তিস্তা পানি বণ্টন, সীমান্ত হত্যা ও অসম বাণিজ্য নিয়ে নিয়মিতভাবে কথা বলছেন, তারাই মূলত ঝুঁকির তালিকায় রয়েছেন। ইনকিলাব মঞ্চের সংগঠক শরীফ ওসমান হাদির ওপর প্রকাশ্য হামলার পর বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় এসেছে।
গোয়েন্দা পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে, সম্ভাব্য হুমকির ধরন শুধু সরাসরি শারীরিক আক্রমণের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। বরং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চরিত্রহনন, ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস, ডিজিটাল নজরদারি এবং হুমকিমূলক বার্তার মাধ্যমে একটি চাপ সৃষ্টির কৌশল অনুসরণ করা হচ্ছে।
নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, এটি একটি ‘মনস্তাত্ত্বিক চাপ তৈরির প্রক্রিয়া’, যার উদ্দেশ্য ভিন্নমতকে নিরুৎসাহিত করা।
উচ্চঝুঁকির তালিকায় রাজনৈতিক অঙ্গনের পাশাপাশি ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের একটি বড় অংশ রয়েছে। বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক কয়েকজন ছাত্রনেতার নিরাপত্তা নিয়ে আলাদা উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো। কয়েকজন ছাত্রনেতা ইতোমধ্যে অজ্ঞাত নম্বর থেকে হুমকি পাওয়ার কথাও জানিয়েছেন।
নিরাপত্তাসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের জন্য এসকর্ট টিম, সাদা পোশাকে নিরাপত্তাকর্মী এবং প্রয়োজনে অস্থায়ী সেফ হাউস ব্যবহারের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ সভা, সমাবেশ কিংবা দেশের বাইরে বা সীমান্ত এলাকায় যাতায়াতের সময় বাড়তি নিরাপত্তা বলয় নিশ্চিত করার নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে একাধিক নিরাপত্তা কর্মকর্তা বলেন, ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক প্রশ্ন করা মানেই ভারতবিদ্বেষ নয়। সমমর্যাদার সম্পর্কের দাবি করাই স্বাভাবিক। কিন্তু যখন এই কণ্ঠগুলোকে ভয় দেখানো বা চুপ করানোর চেষ্টা হয়, তখন তা রাষ্ট্রের ভেতরে অস্থিরতা তৈরি করতে পারে।
বিশ্লেষকদের মতে, বর্তমান প্রেক্ষাপটে জাতীয় ঐক্য, মতপ্রকাশের নিরাপত্তা এবং ডিজিটাল অধিকার রক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। তারা মনে করছেন, রাজনৈতিক মতপার্থক্য থাকলেও সার্বভৌমত্ব ও নাগরিক নিরাপত্তার প্রশ্নে একটি সমন্বিত অবস্থান না নিলে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে।
সরকারি পর্যায়ে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো পূর্ণাঙ্গ বক্তব্য না এলেও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, ঝুঁকির বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হচ্ছে এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ অব্যাহত থাকবে।
উচ্চঝুঁকিতে ৫০ ব্যক্তি হলো: বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা.শফিকুর রহমান। ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ ও মুজিবুর রহমান মঞ্জু-এবি পার্টির দুই শীর্ষ নেতা আন্তর্জাতিক ফোরামে এবং বুদ্ধিবৃত্তিক আলোচনায় ভারতের অযাচিত হস্তক্ষেপের চিত্র তুলে ধরেছেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রধান দুই সমন্বয়ক এবং বর্তমান সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করা নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। ছাত্র আন্দোলনের প্রভাবশালী দুই মুখ হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলম মাঠপর্যায়ে তরুণদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়।
গণঅধিকার পরিষদের শীর্ষ নেতা নুরুল হক নূর ও রাশেদ খান দীর্ঘদিন ধরেই ভারতের একচেটিয়া প্রভাবের বিরুদ্ধে রাজপথে সক্রিয়। হেফাজতে ইসলামের মাওলানা মামুনুল হক এবং ইসলামী আন্দোল
বাংলাদেশের নায়েবে আমির মুফতি রেজাউল করীমের জনভিত্তি ও আধিপত্যবাদবিরোধী অবস্থান তাদের টার্গেটে পরিণত করেছে। মঞ্চ-২৪-এর ইকরামুল হাসান ফাহিম ফরাজী এবং আপ বাংলাদেশের আলী আহসান জুনায়েদও রয়েছেন তালিকায়।
তালিকায় আরো আছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) ভিপি সাদিক কায়েম, যিনি ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে আইকন হিসেবে পরিগণিত হচ্ছেন। ছাত্রদলের পক্ষ থেকে ভিপি প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করা আবিদুল ইসলাম আবিদ, রাকসুর জিএস সালাউদ্দিন আম্মার, রাজশাহী সীমান্ত এলাকায় বিএসএফের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে তিনি স্থানীয়দের সংগঠিত করছেন।





