
উপকূলীয় জেলা বরগুনায় যুগ যুগান্তর ধরেই এক ফসলি কৃষি প্রধান ছিল। লবণাক্ততা, সেচ সংকট, খরা ঝুঁকি ও ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্যের কারণে বছরের অধিকাংশ সময় বিস্তীর্ণ জমি অনাবাদি পড়ে থাকে। ফলে কৃষি উৎপাদন সম্ভাবনার তুলনায় জেলাটি এখনো পিছিয়ে। কৃষিবিদদের মতে, আধুনিক প্রযুক্তি ও পরিকল্পিত ব্যবস্থাপনায় এই চিত্র দ্রুত বদলানো সম্ভব।
জেলায় প্রায় ১ লাখ ৪ হাজার হেক্টর আবাদযোগ্য জমি রয়েছে, যার বড় অংশ লবণাক্ততার কারণে তিন মৌসুমে ব্যবহার করা যায় না। এখনও ধানই প্রধান ফসল; তবে গম, মুগ, সরিষা, তিল, সূর্যমুখী ও সবজির আবাদ সীমিত। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, লবণ সহিষ্ণু ধান ও বোরো চাষ বাড়ছে, কিন্তু রবি ফসলের বিস্তার প্রত্যাশার তুলনায় কম।
কৃষকেরা বলছেন, বাড়তে থাকা লবণাক্ততা, সেচব্যবস্থার দুর্বলতা এবং আধুনিক প্রযুক্তির অভাবই বহুমাত্রিক আবাদে প্রধান বাধা। সাম্প্রতিক জোয়ার চাপ, নদী ভাঙন ও ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধের কারণে বহু জমি লবণাক্ত পানিতে প্লাবিত হয়ে আরও অনাবাদি হয়ে পড়েছে। অপরিকল্পিত স্লুইসগেট ও খাল পুনঃখনন না হওয়ায় পানি প্রবাহ স্বাভাবিক থাকে না।
এদিকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর লবণ সহিষ্ণু ধান, গম ও মুগের নতুন জাত পরীক্ষামূলক ভাবে চালু করেছে। উঁচু বেডে সবজি চাষ, জমি সমতলীকরণ ও সেচব্যবস্থা উন্নয়নের উদ্যোগও নেওয়া হচ্ছে
বরগুনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক রথীন্দ্রনাথ বিশ্বাস বলেন, “বরগুনার কৃষিতে নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। সেচব্যবস্থা উন্নয়ন, লবণ সহিষ্ণু জাত ও ফসল বৈচিত্র্য বাড়ানো গেলে এক ফসলি জমিকেও দুই বা তিন ফসলি চাষে রূপান্তর করা সম্ভব।”
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সরকার, ভূমিমালিক ও কৃষকের সমন্বিত উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে বরগুনা শুধু খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণই হবে না, উপকূলীয় কৃষির সফল মডেলও হয়ে উঠবে। বহুমাত্রিক আবাদ এখন বরগুনার কৃষির ভবিষ্যৎ পথ নকশা।





