
সার্বিয়ার রাজধানী বেলগ্রেডে শনিবার (২২ নভেম্বর) শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে হাজারো সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারী রাস্তায় নামেন। তারা এক বছরের পুরনো রেল দুর্ঘটনা ও শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার বিচার দাবি করেছেন। ২০২৪ সালের ১ নভেম্বর সার্বিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় শহর নোভি সাদে একটি রেলস্টেশনের ছাদ ধসে ১৬ জনের মৃত্যু হয়। সেই সময় দেশটির রাষ্ট্রপতি আলেকজান্ডার ভুচিচ সমর্থিত সার্বিয়ান প্রোগ্রেসিভ পার্টির (SNS) সমর্থক ও স্থানীয় কর্মকর্তারা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন।
এই ঘটনার স্মরণে বেলগ্রেডের নাট্যকলা অনুষদের শিক্ষার্থীরা রাস্তা অবরোধ করেন। এরপর দেশজুড়ে শিক্ষার্থী ও অধ্যাপকদের নেতৃত্বে একটি জাতীয় আন্দোলন গড়ে ওঠে, যা দীর্ঘ ১৩ বছর ক্ষমতায় থাকা রাষ্ট্রপতি ভুচিচের ওপর রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টি করেছে। চারজন হামলাকারী দোষ স্বীকার করে শাস্তি পেয়েছেন। তবে শিক্ষার্থীরা দাবি করছেন, হামলাকারীদের সকলকে শনাক্ত ও বিচারের আওতায় আনা এবং হামলার নির্দেশকারীর খোঁজ করা প্রয়োজন।
বিক্ষোভকারীরা রাষ্ট্রপতি ভুচিচ এবং তার দলকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য দ্রুত নির্বাচনের দাবিও তুলেছেন। বেলগ্রেডের ৫০ বছর বয়সি ভেসনা পেটোভিচ বলেন, “এসএনএস অনেক বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় আছে। এই আন্দোলন থেকে আর কেউ পিছু হটবে না।” গত এক বছরে সার্বিয়ার বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ দেখা গেছে, যেগুলোর মধ্যে অনেকগুলো পুলিশ স্টান গ্রেনেড ও টিয়ারশেলের মাধ্যমে ছত্রভঙ্গ হয়েছে।
বিক্ষোভকারী ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোর অভিযোগ, সার্বিয়ার পুলিশ অতিরিক্ত বল প্রয়োগ করেছে। তবে কতৃপক্ষ দাবি করছে, বিক্ষোভকারীরাই সরকারী দলের কার্যালয়ে হামলা চালিয়েছে। শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, তারা ন্যায়বিচার না পেলে পুনরায় রাস্তায় নামবে।
সার্বিয়ায় চলমান আন্দোলন শুধু একটি দুর্ঘটনার প্রতিক্রিয়া নয়, এটি দেশের গণতান্ত্রিক অধিকার, স্বচ্ছতা এবং শাসনের দায়িত্বের উপর জনগণের সচেতনতার প্রতিফলন। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, শিক্ষার্থীদের এই জোরালো আন্দোলন ভবিষ্যতে সার্বিয়ার রাজনৈতিক কাঠামোতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে।
বিক্ষোভ ও আন্দোলনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা দাবি করছেন, সব হামলাকারী এবং তাদের নির্দেশদাতা শনাক্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে সরকারের প্রতি আহ্বান, দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ও নির্বাচনের নিরাপত্তা রক্ষা করা হোক।
এই আন্দোলন দেশের নাগরিক সমাজকে আরও সক্রিয় করেছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী এবং মানবাধিকারকর্মীরা একত্রিত হয়ে সার্বিয়ার ভবিষ্যতের জন্য সুষ্ঠু বিচার এবং সংবিধান সম্মত শাসনের দাবিতে একযোগে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন।





