
জর্ডান নিলের মিডল ও লেগ বরাবর করা লেন্থ বলটি সাফল করে স্কয়ার লেগে ঠেলে এক রান নিলেন মুশফিকুর রহিম। শেষ হলো যেন দীর্ঘ এক প্রতিক্ষার। আগের দিন শেষ বিকেল থেকেই যে অপেক্ষায় পুরো বাংলাদেশ।
শততম টেস্ট খেলতে নেমে আগের দিন ৯৯ রানে অপরাজিত ছিলেন মুশফিক। পরের দিন দ্বিতীয় ওভারে তিন অঙ্কের জাদুকরী সংখ্যা স্পর্শ করেন অভিজ্ঞ ব্যাটার। স্পর্শ করেন দেশের হয়ে সর্বোচ্চ ১৩ সেঞ্চুরি করা মুমিনুল হককে।
বিভিন্ন সময়ে দেখার মতো অনেক উদযাপন তিনি করেছেন। এবার বিশেষ উপলক্ষে অবশ্য বিশেষ কোনো উদযাপন দেখা যায়নি।
মুশফিকের আগে ১০০ টেস্ট খেলেছেন ৮৩ ক্রিকেটার। উপলক্ষটি শতরানে রাঙাতে পারলেন কেবল ১১ জন। কেবল ব্যাটিং দক্ষতাই নয়, মানসিক দৃঢ়তা এবং ধারাবাহিক পারফরম্যান্সেরও নজির গড়েন তারা। বাংলাদেশের মুশফিক ঢুকে গেলেন সেই কিংবদন্তিদের তালিকায়।
প্রথম ব্যাটার হিসেবে এই নজির গড়েছিলেন ইংল্যান্ডের কলিন কাউড্রে। ১৯৬৮ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে শততম টেস্ট খেলতে নেমে এই ব্যাটার করেছিলেন ১০৪ রান। এর দুই দশক পর এই কীর্তি গড়েন পাকিস্তানের জাভেদ মিয়াঁদাদ। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের বিপক্ষে তার শততম টেস্ট খেলতে নেমে খেলেন ১৪৫ রানের দুর্দান্ত ইনিংস।
এরপর এই ক্লাবে একে একে প্রবেশ করেন গর্ডন গ্রিনিজ ও অ্যালেক স্টুয়ার্ট। ১৯৯০ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের গর্ডন গ্রিনিজ ইংল্যান্ডের বিপক্ষে করেন ১৪৯ রান। তার এক দশক পর ২০০০ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ইংল্যান্ডের স্টুয়ার্ট করেন ১০৫ রান।
২০০৫ সালে এই ক্লাবে যোগ দেন পাকিস্তানের ইনজামাম-উল-হক। জাভেদ মিয়াঁদাদের মতো তারও প্রতিপক্ষ ছিল চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারত। সেদিন এই পাকিস্তানি ব্যাটার ১৮৪ রানে থামেন।
আগের পাঁচজন এক ইনিংসে সেঞ্চুরি করলেও নতুন ইতিহাস গড়েন অস্ট্রেলিয়ার রিকি পন্টিং। তিনি ২০০৬ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে শততম টেস্টে দুই ইনিংসেই শতক হাঁকিয়ে অনন্য রেকর্ড স্থাপন করেন। দুই ইসিংসে তার স্কোর ছিল ১২০ ও ১৪৩।
গ্রায়েম স্মিথ ও হাশিম আমলা দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে ১০০তম ম্যাচে ধৈর্য ও দৃঢ়তার নজির স্থাপন করেন। স্মিথ ২০১২ সালে শততম টেস্টে ১৩১ রান করেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে, আর আমলা ২০১৭ সালে ১৩৪ রান করেন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে।
ইংল্যান্ডের জো রুট ও অস্ট্রেলিয়ার ডেভিড ওয়ার্নার শততম ম্যাচে ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে ইতিহাসে নতুন মাত্রা যোগ করেন। জো রুট ২০২১ সালে ২১৮ রান করেন ভারতের বিপক্ষে, আর অস্ট্রেলিয়ার ডেভিড ওয়ার্নার ২০২২ সালে ২০০ রান করেন দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে।
আগের দিন মুশফিক যখন ক্রিজে যান, বাংলাদেশ তখন ৯৫ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে বেশ চাপে। এরপর মুমিনুলকে নিয়ে শতরানের জুটিতে উড়িয়ে দেন সেই চাপ। এরপর তো লিটন দাসের সঙ্গে টেনে নেন দলকে বড় সংগ্রহের পথে।
সেঞ্চুরির পর অবশ্য বেশিদূর যেতে পারেননি মুশফিক। ম্যাথিউ হ্যাম্ফ্রেসের বলে আউটসাইড এজ হয়ে আউট হন তিনি ১০৬ রান করে।
২১৪ বলে ৫ চারে ইনিংসটি সাজান মুশফিক। তার বিদায়ে ভাঙে পঞ্চম উইকেটে ২০১০ বলে ১০৮ রানের জুটি।





