২০২৫-২৬ অর্থবছরে টিআর কর্মসূচিতে
২ শত কোটি টাকার ১৮৩ প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ

ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে ২ শত কোটি টাকার ১৮৩ প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ

শিবলী সাদিক খান -ময়মনসিংহ প্রতিনিধি :

ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টিআর), কাবিটা ও কাবিখা কর্মসূচির আওতায় প্রায় ২ শত কোটি টাকার ১৮৩টি উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদনের স্বচ্ছতা নিয়ে ব্যাপক প্রশ্ন উঠেছে।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঈশ্বরগঞ্জ প্রেসক্লাব মিলনায়তনে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের উদ্যোগে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মোহাম্মদ রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অনিয়ম, প্রতারণা ও হয়রানির অভিযোগ তোলা হয়। চেয়ারম্যানরা অভিযোগ করেন, উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে স্বেচ্ছাচারিতা, অর্থ বরাদ্দে গড়মিল ও প্রকল্প অনুমোদনে অস্বচ্ছতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে টিআর কর্মসূচিতে ১ কোটি ৬১ লাখ ১৫ হাজার ৪০৮ টাকার বিপরীতে ১০৩টি প্রকল্প অনুমোদন করা হয়। এর মধ্যে ৮নং প্রকল্পে ভূল নামে ২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, আর ১৯নং প্রকল্পে ১২ লাখ টাকা বরাদ্দ থাকলেও চেয়ারম্যানের তালিকায় নাম নেই। অধিকাংশ প্রকল্পেই ৩০ শতাংশ পর্যন্ত অতিরিক্ত ব্যয় বরাদ্দ দেখানো হয়েছে, যা সরকারি অর্থের অপচয় ও লুটপাটের আশঙ্কা সৃষ্টি করেছে।

অন্যদিকে, কাবিটা কর্মসূচিতে ২ কোটি ৪ লাখ ১০ হাজার ৮৮৩ টাকার বিপরীতে ৪৭টি প্রকল্প অনুমোদন করা হয়। এর মধ্যে ৮নং প্রকল্পের ২৯ লাখ টাকার লোকেশন সঠিক নয়, ১০নং প্রকল্পে চেয়ারম্যানের তালিকায় নাম নেই, এবং ২৩নং প্রকল্পের ডিজাইন বরাদ্দকৃত অর্থের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

এছাড়া কাবিখা প্রকল্পে চাল ১২১.৬৫৪ মেট্রিক টন ও গম ১২১.৬৫৪ মেট্রিক টন বরাদ্দের বিপরীতে যথাক্রমে ১৮ ও ১৫টি প্রকল্প নেওয়া হয়। এর মধ্যে গমের ১নং প্রকল্পটি বাতিল করা হয় এবং ৫নং প্রকল্পে সদস্য পরিবর্তনের তথ্য পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এসব প্রকল্পে অনিয়মের পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হলে ব্যাপক দুর্নীতির চিত্র প্রকাশ্যে আসতে পারে।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সানজিদা রহমান বলেন, “প্রকল্প তালিকার ৮০ শতাংশ সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যানরা দেন। আমি উপজেলার প্রশাসক ও উন্নয়ন কমিটির সভাপতি হিসেবে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আবেদনের ভিত্তিতে ২০ শতাংশ প্রকল্প দেই। প্রকল্প তালিকার স্বচ্ছতা নিয়ে ডিআরও তদন্ত করছেন। আমার কাছে তালিকা এলে আমি স্বাক্ষর করি, বাস্তবায়ন করে প্রকল্প কমিটি। কোনো অনিয়মকে প্রশ্রয় দিই না।”

অন্যদিকে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, “প্রকল্প অনুমোদনের সভা আহ্বান না করে ইউএনও ম্যাডাম এককভাবে স্বাক্ষর দিচ্ছেন। আমি সদস্য সচিব হিসেবে যাচাই না করেই স্বাক্ষর করতে বলা হয়। আমি প্রকল্পের বরাদ্দ ও বাস্তবতা যাচাই করে স্বাক্ষর দিতে চাইলে কয়েকজন চেয়ারম্যান আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তোলে। প্রকল্প অনুমোদনই না হলে দুর্নীতি বা অনিয়মের সুযোগ কোথায়?”

উপজেলায় উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়ে ইউএনও ও পিআইওর মধ্যে দ্বন্দ্ব এবং ইউনিয়ন চেয়ারম্যানদের ক্ষোভে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটিতে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে।